![]() |
| আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত শতক। |
প্রতিভা আর দারুণ শটে দর্শকদের মুগ্ধ করিয়ে ঘরোয়া লিগে মাঠ মাতানো ব্যাটার লিটন যখন পাঁ রাখেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, ঠিক সে সময়টাতেই পড়তে হয় ব্যর্থতার মুখে। ক্যারিয়ারের শুরুটা রঙিন না হওয়ায়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি। একসময় দল থেকেও ছিটকে পড়েন এই ব্যাটার। এমনকি ট্রলের শিকার থেকে বাদ পড়ে নি লিটন দম্পতি দেবশ্রী সঞ্চিতাও। তবে লিটন এ সবকিছুই সহ্য করে নিয়েছেন মুখটা বুজে। তখন কীই-বা করার ছিল লিটনের? ৩২ টেস্ট ক্যারিয়ারের যে তিনটি শতকের দেখা পেয়েছেন তাও কিন্তু সম্প্রতি সময়েই। এর আগে লিটনের ব্যাটে ছিল না কোন আহামরি পারফরম্যান্স। সুযোগ পেয়েও দিনের পর দিন ব্যাট হাতে নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যার্থ লিটন।
তবুও, কখনো কোন আক্ষেপ কিংবা হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় নি এই ক্লাসিক্যাল মাস্টারকে। এসবের মধ্য থেকেই আয়ত্ত্ব করে নিয়েছেন ছন্দে ফেরার কৌশলটা। আর তা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়ে ঠিক এখন পারফর্ম করে যাচ্ছেন নিয়মিত। নিজেকে ছন্দে ফিরাতে শিখেছেন নতুন নতুন টেকনিক। এজন্য অবশ্য অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হয়েছে লিটনকে।
![]() |
| কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজেকে ফিরিয়েছেন ছন্দে! |
এইসবের সুবাদেই গত সিরিজে প্রোটিয়াদের বিপক্ষেও ছিলেন দুর্দান্ত। এর কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ১ম টেস্ট ম্যাচে লিটনের ৮৮ রানের এক ইনিংস ছিল ঝলমলে। ঠিক তার পরের ম্যাচেই হাঁকিয়েছেন ক্যারিয়ারের ২য় সেন্সুরি।
| নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে লিটনের করা শতক। |
বর্তমানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাদা পোশাকেও লিটন আছেন ছন্দে। চট্টগ্রামের প্রথম ম্যাচে খেলেছিলেন ৮৮ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। পরের ম্যাচে ঢাকায় যখন টসে জিতে ব্যাট করতে আশা টাইগাররা পড়তে হয়েছিল ধ্বংসস্তুপের মুখে, ঠিক তখনই মুশিকে সাথে নিয়ে গড়েছেন ২৭২ রানের এক ঐতিহাসিক জুটি। দলকে করেছেন বিপদমুক্ত এবং দেখিয়েছেন লঙ্কানদের বিপক্ষে একটি ভালো অবস্থানে দাঁড়ানো মত স্কোর করার আশা। চট্টগ্রামে ১২ রানের আক্ষেপ নিয়ে থাকা এই ব্যাটার হাঁকিয়েছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতকটাও।
সবশেষে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন নিজের মনের ভিতর চেপে রাখা আক্ষেপগুলো। সফলতার রহস্য গোপন রাখলেও অবশ্য খুব সহজ সরল ভাষায় উত্তর দিয়েছেন নিজেকে নিয়ে করা বাকী প্রশ্নগুলোর। সমালোচনার জবাবে লিটন জানিয়েছেন, “ সবাই আমার থেকে ভালো পারফর্ম আশা করে, চেষ্টা তো সবসময় করি। কিন্তু কিছু সময় ব্যর্থ হই, কিছু সময় সফল হই। এটাই ক্রিকেট, এভাবেই চলতে থাকবে। আজকে ভালো করতেছি, কালকে আবার খারাপ হলে হতেও পারে। এটা মেনেই জীবন। এভাবেই চলতে থাকবে”!
একটা ব্যাক্তির জীবনে উত্থান-পতন থাকবেই। এটাকে বিশ্বাস করেই লিটন নিজেকে নিয়ে এগিয়ে চলছেন প্রতিনিয়ত। লিটন দাস বর্তমানে রয়েছেন সেরাদের কাতারে। ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক এখন তিনি। তার পরের অবস্থানে রয়েছেন উসমান খাজা, বাবর আজম ও ইমাম উল হক'দের মত ব্যাটাররা। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের রান সংগ্রাহকদের তালিকায় লিটনের অবস্থান ষষ্ঠ।
![]() |
| ঢাকা টেস্টে লঙ্কানদের বিপক্ষে হাঁকানোর পর, শান্তিতে উদযাপন। |
সমালোচনার জবাবগুলো মুখ থেকে না বের হলেও, ব্যাট থেকে কিন্তু ঠিকই দিচ্ছেন লিটন। এভাবেই চলতে থাকুক সমালোচনার প্রতিত্তোর। লিটনের থেকে কোটি প্রাণ আশা করে সাফল্যের সাথে দীর্ঘ ক্যারিয়ারের। লিটনও কতটুকু পারবে নিজেকে সাফল্যের সাথে টিকিয়ে রাখার? —সেটাই এখন দেখার বিষয়।



মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন